**শিরোনাম:**
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার নতুন অধ্যায়
**ভূমিকা:**
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
**অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পটভূমি:**
দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল। তবে তাদের কার্যক্রম শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে:
1. **রাজনৈতিক অচলাবস্থা:** প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থতা।
2. **অর্থনৈতিক চাপ:** ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, এবং জ্বালানি ঘাটতিতে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ।
3. **আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি:** রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা।
এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনমনে আস্থা হারাতে শুরু করে।
**সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ:**
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অক্ষমতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানায়। তারা নিম্নলিখিত কারণ দেখিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে:
1. **শান্তি প্রতিষ্ঠা:** দেশজুড়ে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ।
2. **সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি:** একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি।
3. **জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা:** অন্তর্বর্তী সরকারে আস্থা হারানো জনগণকে সুরক্ষা প্রদান।
**রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:**
১. **আওয়ামী লীগ ও বিএনপি:**
দুই প্রধান দলই সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ এটিকে সাদরে গ্রহণ করেছে, যেখানে বিএনপি প্রথমে সমর্থন দেখালেও পরবর্তীতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২. **ছোট দল ও নাগরিক সমাজ:**
বেশ কয়েকটি ছোট দল সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু একটি সুশাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে।
৩. **আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:**
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে পারে।
**সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি:**
সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা যত দ্রুত সম্ভব দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে, অতীতে সেনা শাসনের অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
**সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:**
১. **গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া:** সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর করে তুলতে পারে।
২. **অর্থনৈতিক সংকট:** রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে এবং অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. **আন্তর্জাতিক চাপ:** বিদেশি সাহায্য এবং সমর্থন পেতে হলে সেনাবাহিনীকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফিরে আসার চাপ সহ্য করতে হবে।
**উপসংহার:**
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যদিও সেনাবাহিনী শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন অপেক্ষা করছে, সেনাবাহিনী কত দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।