আমান আযমীকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা**



---


### **আমান আযমীকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা**  

**বার্তা ডেস্ক**  

**January 29, 2025**  


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গুম-খুনের নির্দেশ দিয়েছেন—এমন তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। তাঁর পদত্যাগের পর গোপনে পরিচালিত বন্দিশালা 'আয়নাঘর' থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন বন্দি। এদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের সাবেক নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আমান আযমী। গোপন কারাগারে আটকে রেখে তাঁকে হত্যার নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা বলে অভিযোগ করা হয়েছে।  


সোমবার (২৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত **"আফটার দ্য মুনসুন রেভ্যুলুশন—এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ"** শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।  


### **গোপন কারাগারে হত্যার নির্দেশনা**  


একজন সেনা কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়নাঘরে বন্দি থাকা এবং তাঁর শারীরিক অবনতির বিষয়টি শেখ হাসিনার জানা ছিল। একাধিকবার তাঁর মুক্তির অনুরোধ জানানো হলেও, শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি আমান আযমীকে হত্যার পরামর্শ দেন।  


সেই কর্মকর্তা জানান, *"আমি তেমনটি করিনি। বরং এরপর থেকে আমি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলিনি।"*  


### **মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা**  


প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা, সাংবাদিক, সমালোচক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার।  


### **গুম তদন্ত ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের তথ্য**  


প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারে কমপক্ষে **৩,৫০০** মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা উপদেষ্টারা, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম **মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।**  


গুমের ঘটনায় জড়িত এক কর্মকর্তা এইচআরডব্লিউকে বলেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতারা এসব আটকের বিষয়ে জানতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।  


### **মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বীকারোক্তি**  


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গুম হওয়া তিনজন—**মাইকেল চাকমা, মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) এবং আবদুল্লাহ আমান আযমী**—মুক্তি পেয়েছেন। এরা সবাই নির্জন কারাগারে বছরের পর বছর বন্দি ছিলেন। মুক্তির পর তাঁরা জানিয়েছেন, সেখানে আরও বহু বন্দিকে আটকে রাখা হয়েছিল।  


২০১৬ সালে আমান আযমী ও আরমানের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে **হুম্মাম কাদের চৌধুরী**কেও আটক করা হয়। ২০১৭ সালে তাঁকে এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় যে, তিনি তাঁর আটকের বিষয়ে চুপ থাকবেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তিনি এইচআরডব্লিউকে জানান, *"আমি যে ভবনে ছিলাম, সেখানে আরও বহু বন্দি ছিল।"*  


### **গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)**  


প্রতিবেদনে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে, আইনজীবী **মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)**-এর ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট তাঁকে পরিবারের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাঁকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়।  


একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরমানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, *"আমি আদেশ না মানলে আমার মৃত্যুদণ্ড হতে পারত।"*  


গুমে জড়িত আরেক কর্মকর্তা বলেন, *"এ ধরনের সিদ্ধান্ত সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে নেওয়া হয়। আমান আযমী, আরমান এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরীর মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা ছিল শেখ হাসিনার হাতে।"*  


---



Post a Comment

Previous Post Next Post