মসজিদে হামলায় আরও এক মৃত্যুর ঘটনা, নিহত বেড়ে ৪

 


**মসজিদে হামলায় আরও এক মৃত্যুর ঘটনা, নিহত বেড়ে ৪**  


**মাদারীপুর, ১৮ মার্চ ২০২৫:** মাদারীপুরে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় মসজিদের ভেতরে কুপিয়ে জখম হওয়া আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাজেল হাওলাদার (১৮)। এই নিয়ে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার জনে। এ ঘটনায় এখনও একজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।  


### **নিহতদের পরিচয়**  

নিহত তাজেল হাওলাদার সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর-টেকেরহাট গ্রামের আজিজুল হাওলাদারের ছেলে। এর আগে একই ঘটনায় নিহত হন তার তিন ভাই—আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫), সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০) এবং তাদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার।  


সাইফুল ইসলাম ছিলেন খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আতাউর ও সাইফুল একই গ্রামের আজিবর সরদারের ছেলে, আর পলাশ ছিলেন মুজাম সরদারের ছেলে।  


### **কীভাবে ঘটল এই হামলা?**  

৮ মার্চ খোয়াজপুর এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। একটি পক্ষের নেতা ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খান, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম।  


এই দ্বন্দ্বের কারণে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খোয়াজপুর বাজারে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে প্রতিপক্ষ হোসেন সরদারের দুই পা ভেঙে দেন সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হোসেন সরদার দল বদলে বিএনপির শাজাহান মোহরির সঙ্গে যোগ দেন এবং প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।  


### **মসজিদে হামলা ও হত্যাকাণ্ড**  

৮ মার্চ সকালে হোসেন সরদারের অনুসারীরা সাইফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালান। প্রাণ বাঁচাতে সাইফুল ও তার দুই ভাই পাশের মসজিদে আশ্রয় নেন। কিন্তু হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তাজেল হাওলাদার ও অলিল সরদার (৪০) গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা এরপর আতাউর ও সাইফুলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।  


### **চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু**  

তাজেলের বড় ভাই রাজু হাওলাদার জানান, হামলার পর আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৫ মার্চ তাজেলকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে বিকেলে তার মৃত্যু হয়।  


### **পুলিশের তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান**  

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা বলেন,  

*"তাজেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। নিহতের পরিবার যদি মামলা করে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"*  


৮ মার্চ রাতে নিহত সাইফুল ইসলামের মা সুফিয়া বেগম ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন—হোসেন সরদার, সুমন সরদার, কুলসুম বেগম, রুবেল ব্যাপারী ও সুজন মাহমুদ।  


পুলিশ জানায়, হামলায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মাদারীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post