প্রতিবেদন শিরোনাম:
“দুদকের জালে জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই মুখ্য সংগঠক: সম্পদের হিসাব গোপনের অভিযোগে গ্রেপ্তার”
প্রতিবেদক: বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | স্থান: ঢাকা
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সার্জিস আলমকে সম্পদের সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার সকালে পৃথক অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে দুজনকে আটক করা হয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, একাধিকবার নোটিশ পাঠানোর পরও তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদের বিবরণী জমা দেননি এবং যে তথ্য প্রদান করেছেন, তা সন্দেহজনক ও অসম্পূর্ণ।
দুদকের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, “দীর্ঘ তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, হাসনাত ও সার্জিস বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন যেগুলোর কোনো বৈধ উৎস নেই। তারা বিভিন্ন নামে ও বেনামে সম্পদ গোপন করে রেখেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে জাল দলিল ব্যবহার করে সরকারি নথি তৈরি করেছেন।”
তদন্তে উঠে আসে, হাসনাত আব্দুল্লাহ রাজধানীর গুলশানে ৪,২০০ বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিক, যার আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া নরসিংদী ও গাজীপুরে তার নামে ও স্ত্রীর নামে রয়েছে প্রায় ১৫ বিঘা জমি। অন্যদিকে সার্জিস আলমের নামে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে, যার কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। তাছাড়া একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় অর্থ মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে পাঠানোরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এই ঘটনার পর দলটির রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান মাহবুব ইলাহী এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এসব ঘটনায় মর্মাহত। যদি কেউ অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে দল কোনোভাবে তা প্রশ্রয় দেবে না। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই নেতার আইনজীবী জানান, “তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তারা নির্দোষ, এবং দুদকের নোটিশে যথাযথ জবাব দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত আদালতে জামিন আবেদন করব।”
এই মামলার তদন্তভার ইতিমধ্যে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই দুজন ছাড়াও আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও সম্পদ গোপনের অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এই অভিযান দুদকের একটি সাহসী পদক্ষেপ, আবার কেউ মনে করছেন এটি হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল।