**ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নির্যাতন: এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি**
**By Rakib**
**January 29, 2025**
২০০৮-২০০৯ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম একসময় ছিলেন মুহসীন হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। ২০১৩ সালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে সন্দেহের ভিত্তিতে ভয়াবহ নির্যাতন চালায়। চারতলা থেকে ফেলে দেওয়া হয় তাকে, আর তাতে তার দুই পা ভেঙে ১৩ টুকরো হয়ে যায়।
### ভয়াবহ নির্যাতনের শুরু
২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে রাকিবুল নিজ রুমে (৫৫৫ নম্বর) পড়ছিলেন। তখন ছাত্রলীগের কর্মী হেলাল উদ্দিন সুমন এসে জানায়, তাকে ৪৬২ নম্বর রুমে যেতে বলা হয়েছে। এরপরই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী তাকে টেনে-হিঁচড়ে সেই রুমে নিয়ে যায় এবং সেখানে নির্মম নির্যাতন শুরু করে।
তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়, তার মোবাইল ফোন চেক করে ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। এরপর একে একে মেহেদী হাসান, গোলাম রসুল বিপ্লব, আবু জাহিদ রিপন, জাহিদুল ইসলাম, আহসান হাবিব রানা ও হেলাল উদ্দিন সুমন তাকে লাথি, ঘুষি, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করতে থাকে।
### পিপাসার্ত রাকিবুলকে পানির বদলে দেওয়া হয় প্রস্রাব
নির্যাতনের একপর্যায়ে প্রচণ্ড পিপাসায় তিনি পানি চাইলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তার সঙ্গে নৃশংস আচরণ করে। তারা বোতলে করে প্রস্রাব এনে তাকে জোর করে তা পান করতে বলে।
### চারতলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়
একপর্যায়ে তারা রাকিবুলকে ৪৬২ নম্বর কক্ষের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়, কারণ সেই জানালায় কোনো গ্রিল ছিল না। নিচে পড়ার পর তার দুই পা ভেঙে ১৩ টুকরো হয়ে যায়। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তিনি রেজিস্ট্রার ভবনের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানেও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে খুঁজে বের করে আবারও হলের ৪৬২ নম্বর রুমে নিয়ে যায় এবং পুনরায় নির্যাতন শুরু করে।
### বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
রাকিবুল জানান, হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরো বিষয়টি জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তারা ছাত্রলীগকে নির্যাতনের জন্য সুযোগ করে দেয়। একপর্যায়ে প্রশাসন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, যা আরও ভোগান্তির কারণ হয়।
### আজও পঙ্গুত্বের শিকার
এই ঘটনার পর থেকে রাকিবুল স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। চিকিৎসা করিয়েও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এখনো তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না, সন্তানকে কোলে নিতে পারেন না এবং শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন।
### শেষ আশার কথা
নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে রাকিবুল বলেন, “দেশে ও বিদেশে বহু চিকিৎসা করিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। এখনো ছাত্রলীগের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি। স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের আশা নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছি। আল্লাহ জানেন, আমি আর কখনো স্বাভাবিক হতে পারব কি না।”
(সম্পর্কিত: **১০ মিনিটে এমপি আজিমের লাশ টুকরো করে ভরা হয় চার ট্রলি ব্যাগে**)