**বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যেকোনো সময় সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা**

 


### **বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যেকোনো সময় সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা**  


**ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২৫:** বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অপহরণ ও আটক থাকার ঘটনাগুলো দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতির যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে যেকোনো সময় বড় ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।  


#### **লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির হামিদের মুক্তি ও রহস্যজনক পরিস্থিতি**  

গত ৭২ ঘণ্টা অপহৃত থাকার পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির হামিদকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে, এখনো সেনাবাহিনীর তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিজিএফআই-এর হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, যা পুরো পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।  


বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের পর মনির হামিদকে একটি অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছিল, যেখানে তাকে নানা ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরও তার মুক্তির প্রকৃত কারণ বা শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দেশের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রতিফলন হতে পারে।  


#### **সেনাবাহিনীর ভেতরে উত্তেজনা ও বিভাজন**  

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর ভেতরে ভিন্ন মতাদর্শের দুটি পক্ষ সক্রিয় হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি পক্ষ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সমর্থন করলেও, অন্যপক্ষ বর্তমান সরকার এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট। সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য মনে করছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।  


বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বর্তমান পরিস্থিতির সমাধান দ্রুত না হয়, তবে সেনাবাহিনীর ভেতরে অসন্তোষ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে যেকোনো সময় অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।  


#### **ডিজিএফআই-এর ভূমিকা ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা**  

দেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) বর্তমানে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আটক রেখেছে বলে জানা গেছে। নতুন ডিজি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সেনাবাহিনীর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তবে এর ফলাফল কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।  


অনেক বিশ্লেষকের মতে, ডিজিএফআই-এর বর্তমান তৎপরতা সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাকে উসকে দিতে পারে।  


#### **রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া**  

এই ঘটনাগুলোর প্রভাব ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলেও পড়তে শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলো সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আটক বা অপহরণের ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। অন্যদিকে, সরকার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও অভ্যন্তরীণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।  


#### **বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা**  

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারে। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশে অতীতেও সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, এবং বর্তমান পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনাকে আরও উসকে দিচ্ছে।  


বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন আরও বেড়ে যায় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে যেকোনো সময় একটি বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক চিত্রকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।  


#### **উপসংহার**  

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেতরের বিভাজন, ডিজিএফআই-এর ভূমিকা, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা – সব মিলিয়ে দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  


যদি পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান করা না হয়, তবে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের পথে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি হতে পারে। এখন সময়ই বলে দেবে, বাংলাদেশ কি আরেকটি সামরিক শাসনের পথে যাচ্ছে, নাকি বর্তমান সংকট রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post